November 13, 2025, 3:56 pm

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক অনুমোদিত দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন পোর্টাল
সংবাদ শিরোনাম :
গণভোট ও সংসদ নির্বাচন একই দিনে অবরোধ/সাড়ে চার ঘণ্টা পর স্বাভাবিক যান চলাচল ঢাকা–খুলনা মহাসড়কে রাজবাড়ীতে থেমে থাকা বাসে কুষ্টিয়াগামী এসবি পরিবহনের ধাক্কা, আহত ১৫ মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলা: শেখ হাসিনাসহ তিনজনের রায় ১৭ নভেম্বর কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের দুটি দুর্নীতির মামলা সশস্ত্র বাহিনীর বিশেষ ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা আরও সাড়ে তিন মাস বাড়লো আইনশৃঙ্খলা স্থিতিশীল হলে পুনরায় চালু হবে ভারত-বাংলাদেশ আন্তঃদেশীয় ট্রেন ‘অপারেশন ফার্স্ট লাইট’: পদ্মার চরে চার জেলায় ১,৫০০ পুলিশ সদস্যের বিশেষ অভিযান পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে আমদানির সুপারিশ ট্যারিফ কমিশনের কুষ্টিয়ায় আবারও ডিসি পরিবর্তন/ ইকবাল হোসেন আসছেন নতুন জেলা প্রশাসক হিসেবে

ফরিদা পারভীনকে কুষ্টিয়ায় দাফনের বিরোধীতায় স্বামী হাকিম, দাফনের দাবি লালন মাজার প্রাঙ্গণেও

দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
বাংলাদেশের লালনসংগীতের কিংবদন্তি, শিল্পী ফরিদা পারভীনকে কোথায় দাফন করা হবে—এ নিয়ে শুরু থেকেই দেখা দেয় মতবিরোধ। কুষ্টিয়ার পৌর কবরস্থানে মা–বাবার পাশে তাঁকে সমাহিত করার পক্ষে ছিলেন সন্তানরা। অন্যদিকে স্বামী, খ্যাতনামা বংশীবাদক গাজী আবদুল হাকিমের ইচ্ছা ছিল, রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দিয়ে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর ঢাকার মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তাঁকে সমাহিত করা। এ নিয়ে রাতভর চলেছে পরিবার ও ঘনিষ্ঠ মহলের মধ্যে আলোচনা, দ্বন্দ্ব ও মতবিনিময়। এমনকি লালন অনুসারী ও স্থানীয় সংস্কৃতি অঙ্গনের অনেকেই দাবি তুলেছেন, ফরিদা পারভীনের দাফন যেন লালন মাজার প্রাঙ্গণেই সম্পন্ন হয়।
শিল্পী ফরিদা পারভীন শনিবার রাত ১০টা ১৫ মিনিটে রাজধানীর একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বয়স হয়েছিল ৭১ বছর। দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে কিডনি রোগে ভুগছিলেন তিনি। নিয়মিত ডায়ালাইসিস নিতে হলেও গান ছিল তাঁর প্রাণশক্তি। হাসপাতালের বিছানায় থেকেও তিনি গুনগুন করতেন লালনের গান। কিন্তু চিকিৎসকদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে না–ফেরার দেশে পাড়ি দিলেন বাংলার সংগীতাঙ্গনের এই উজ্জ্বল নক্ষত্র। নিভে গেল সেই কণ্ঠস্বর, যিনি লালনের দর্শন ও গানের মর্মভেদী ব্যাখ্যা দিয়ে কোটি মানুষের হৃদয় জয় করেছিলেন।
ফরিদা পারভীনের মৃত্যুপরবর্তী সময়ে কোথায় তাঁকে সমাহিত করা হবে—এ নিয়ে দ্বন্দ্ব প্রকট আকার ধারণ করে। স্বামী গাজী আবদুল হাকিম সংবাদমাধ্যমে জানান,
“শিল্পী ফরিদা পারভীন রাষ্ট্রের সম্পদ। তাঁর দাফন হওয়া উচিত ঢাকায়, যাতে সর্বস্তরের মানুষ শ্রদ্ধা নিবেদন করতে পারেন। শহীদ মিনারে নেওয়া হোক, বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদে জানাজা শেষে মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হোক। আর জীবনের বড় অংশ যে গানকে ঘিরে কেটেছে, তাঁর হাতে গড়া ‘অচিন পাখি’ স্কুলে মরদেহ একবার নেওয়া হোক।”
তবে সন্তান নাহিল ও জিহান দৃঢ়তার সঙ্গে জানান, মা সবসময়ই চেয়েছেন কুষ্টিয়ার মাটিতেই চিরনিদ্রায় শায়িত হতে। ছেলে নাহিল বলেন,
“আমার মায়ের অসিয়ত ছিল, তাঁকে যেন তাঁর বাবা-মায়ের কবরে কুষ্টিয়ায় সমাহিত করা হয়। এটা তিনি লিখেও দিয়ে গেছেন।”
পরিবারের এই দুই ভিন্নমতের কারণে হাসপাতালে ঘণ্টাখানেক ধরে আলোচনা চলে। অবশেষে সিদ্ধান্ত হয়—ঢাকায় সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে কুষ্টিয়ার পৌর কবরস্থানে বাবা দেলোয়ার হোসাইন ও মা রওফা বেগমের পাশে তাঁকে দাফন করা হবে। পরে গাজী আবদুল হাকিমও ছেলের কথায় রাজি হয়ে যান।
ব্যক্তিজীবনে ফরিদা পারভীন ছিলেন একসময়ের খ্যাতিমান গীতিকার-সুরকার আবু জাফরের স্ত্রী। তাঁদের সংসারে জন্ম নেয় এক মেয়ে ও তিন ছেলে। আবু জাফরের লেখা ও সুর করা ‘এই পদ্মা এই মেঘনা’, ‘তোমরা ভুলে গেছো মল্লিকাদির নাম’, ‘নিন্দার কাঁটা’ প্রভৃতি গান ফরিদা পারভীনের কণ্ঠে আজও অমর। তবে সেই সংসারের পর বিচ্ছেদের মধ্য দিয়ে নতুন জীবনে ২০০৫ সালের ১৭ জানুয়ারি তিনি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন বংশীবাদক গাজী আবদুল হাকিমের সঙ্গে।
ফরিদা পারভীনের মৃত্যুতে শুধু তাঁর পরিবার নয়, সমগ্র জাতি হারাল এক সাংস্কৃতিক সম্পদকে। রবিবার সকালে হাসপাতালের আনুষ্ঠানিকতা শেষে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় তাঁর তেজকুনীপাড়ার বাসায়। সকাল সাড়ে ১০টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাখা হয় মরদেহ, যেখানে সর্বস্তরের মানুষ ভিড় করেন শ্রদ্ধা জানাতে। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে জানাজা সম্পন্ন হয়।
পরিবার জানায়, বেলা একটার দিকে কুষ্টিয়ার উদ্দেশে রওনা দেওয়া হয় মরদেহ নিয়ে। সন্ধ্যার পর বাদ মাগরিব তাঁর দাফন সম্পন্ন হবে কুষ্টিয়ার পৌর কবরস্থানে। সেখানে মা-বাবার পাশে চিরশায়িত হবেন বাংলার সংগীতের এই সম্রাজ্ঞী।
এদিকে ফরিদাকে, লালনের মাজার প্রাঙ্গণে দাফনেরও দাবি জোনিয়েছেন লালন ঘরানার অনেক বাউল কর্মী।
বাংলার সাংস্কৃতিক ভুবনে যে শূন্যতা তৈরি হলো, তা সহজে পূরণ হওয়ার নয়।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Comments are closed.

পুরোনো খবর এখানে,তারিখ অনুযায়ী

© All rights reserved © 2024 dainikkushtia.net
Maintenance By DainikKushtia.net